ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে অবতীর্ণ আমেরিকা

Spread the love

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে অবতীর্ণ আমেরিকা, উড়ে গেল ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র! তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি এবার সময়ের অপেক্ষা?

22/06/2025 ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে অবতীর্ণ আমেরিকা, উড়ে গেল ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র! তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি এবার সময়ের অপেক্ষা ?

গত দশ দিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে চলতে থাকা ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ হঠাৎ করেই পেল নতুন মাত্রা। শুক্রবার গভীর রাতে এই উত্তপ্ত দ্বন্দ্বে সরাসরি অংশ নিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাল তারা। লক্ষ্যস্থল ছিল—ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান—যেগুলো বহুদিন ধরেই ইরানের পরমাণু শক্তি কর্মসূচির মূল ঘাঁটি বলে পরিচিত। এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং সামরিক মহলে তীব্র আলোড়ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বের সামনে এক ভয়াবহ প্রশ্ন উঠে দাঁড়িয়েছে—তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি তাহলে আর খুব দূরে নয়?

তিনটি জায়গায় মার্কিন হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে এমওপি বা ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর নামক বিশেষ ধরনের ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা, যার ওজন প্রায় ১৩ হাজার কেজি। এটি বিস্ফোরণের আগে মাটির অন্তত ৬০ মিটার নিচে প্রবেশ করতে পারে। মূলত ফোর্দোর মতো গভীর ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই এই বোমার ব্যবহার। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে হামলার খবর নিশ্চিত করে জানানো হয়েছে, প্রতিটি লক্ষ্যবস্তুর উপর দুটি করে বোমা ফেলা হয়েছে।

এই হামলার পটভূমিতে রয়েছে এক জটিল ও রক্তক্ষয়ী প্রেক্ষাপট। চলতি মাসের ১৩ তারিখ, ইসরায়েল আকস্মিকভাবে ইরানের কয়েকটি সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানে। তাদের দাবি ছিল, ইরান খুব শিগগিরই পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর পথে রয়েছে, আর তাই এই হামলা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরাসরি বলেন, ইরান যাতে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ইরান পাল্টা জবাবে শত শত রকেট ও ড্রোন ছোঁড়ে ইসরায়েলের দিকে। তারপর থেকেই শুরু হয় এক টানা আকাশপথে হামলা-পাল্টা হামলা। গত দশ দিনে দুই পক্ষের মধ্যে এই সংঘাত শুধু তীব্রই হয়নি, বরং আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। আর তার মধ্যেই এবার সেই উত্তপ্ত আগুনে ঘি ঢেলে দিল আমেরিকার সরাসরি প্রবেশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মার্কিন হামলা কেবল ইরান নয়, গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। কারণ ইরান ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তারা শুধু ইসরায়েল নয়, আশেপাশের সব দেশকে টার্গেট করতে পারে যারা আমেরিকার পক্ষ নিচ্ছে বা সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ইরান হরমুজ প্রণালীর মতো গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথেও হামলার ইঙ্গিত দিয়েছে। এইসব রুট দিয়েই বিশ্ববাজারের বিশাল পরিমাণে তেল রপ্তানি হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে অস্থিরতা, জ্বালানির দাম বাড়ছে হু-হু করে।

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মাত্র দুই দিন আগেই বলেছিলেন, ইরান যদি আলোচনায় বসে, তাহলে যুদ্ধের দরকার পড়বে না। তিনি ইরানকে দু’সপ্তাহ সময় দিতে চেয়েছিলেন আলোচনার জন্য। অথচ সেই সময় শেষ হবার আগেই সরাসরি হামলা চালানো হল। আরও আশ্চর্যের বিষয়, এই হামলার আগে তিনি কংগ্রেসের অনুমতিও নেননি। যদিও মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট এককভাবে কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন না—সেই ক্ষমতা একমাত্র কংগ্রেসের। তবে প্রেসিডেন্ট যেহেতু দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, তাই তিনি কৌশলগত সামরিক অভিযান চালাতে পারেন। অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। যেমন ২০১৭ সালে ট্রাম্প সিরিয়ায় কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে বিমান হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

সম্প্রতি কংগ্রেসের উভয় দলের একাধিক আইনপ্রণেতা “ওয়ার পাওয়ার রেজোলিউশন” নামে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল প্রেসিডেন্টের একক সিদ্ধান্তে সামরিক হস্তক্ষেপ সীমিত করা। কিন্তু সেই প্রস্তাব এখনও আইন হিসেবে কার্যকর হয়নি। ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের এই হামলা কার্যত আইনি প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই ঘটেছে।

এই মুহূর্তে গোটা দুনিয়া তাকিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশপানে। কোথা থেকে আর কোন বিস্ফোরণের আওয়াজ ভেসে আসবে, কেউ জানে না। পরিস্থিতি এমনই টানটান যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়—including রাষ্ট্রপুঞ্জ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, রাশিয়া—নানা স্তরে শান্তির আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই।

এই সংঘাত যদি রাশিয়া বা চীনের মত অন্যান্য পরাশক্তিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে টেনে আনে, তাহলে তা বিশ্বের ইতিহাসে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বহু আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, একে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা বললে অত্যুক্তি হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *