
বিলুপ্তির পথে বালুরঘাটের রিকশা, লড়াই জারি কয়েকজন চালকের
বিলুপ্তির মুখে বালুরঘাটের রিকশা: শেষ ভরসা কয়েকজন প্রবীণ চালকের লড়াই
এক সময় বালুরঘাট শহরের গলি-মোড়, অলিগলি—সবখানেই দেখা যেত এক পরিচিত দৃশ্য: হুড-ওয়ালা, গদি দেওয়া তিনচাকার রিকশা আর ঘাম ঝরানো চালকের ক্লান্ত পা। রোগী পরিবহণ হোক বা কলেজ পড়ুয়া যুগলের নিরালা সফর, কিংবা শহরের সিনেমা হলে নতুন পোস্টার টাঙানোর প্রচার—সবেতেই ভরসা ছিল এই রিকশাই।
কিন্তু সময় বদলায়। প্রযুক্তি আসে, নতুন প্রজন্মের পছন্দ-অপছন্দ বদলে যায়। সেই পরিবর্তনের ঢেউয়ে আজ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বালুরঘাটের রিকশা। যেখানে একসময় প্রায় পাঁচশোর বেশি রিকশা শহরের রাজপথে চলত, আজ তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪০-৫০টি-তে। শহরের ট্র্যাফিক লাইনের পাশেও আর দেখা মেলে না সেই পুরনো, কাঠের ছাতাওয়ালা বাহনের।
খিদিরপুরের প্রবীণ রিকশাচালক হরিপদ নট্য বলেন, “আগে দিনে ৫০০-৮০০ টাকা রোজগার হত, এখন কোনও মতে ২০০ টাকা ঘরে আসে।” আরেকজন, ডানলপ মোড়ের টিপু দাস হতাশ কণ্ঠে জানান, “টোটো এসে সব শেষ করে দিল। আধুনিক ছেলেমেয়েরা তো রিকশা চড়তেই চায় না।”
টোটোর দাপটে শহরে আজ আর জায়গা নেই এই পরিশ্রমী বাহনের জন্য। প্রশাসনের তরফ থেকেও নেই কোনও সহযোগিতা, নেই কোনও পুনর্বাসনের বার্তা। ফলে যারা আজও চালিয়ে যাচ্ছেন রিকশা, তারা মূলত লড়ছেন জীবনের সঙ্গে, অস্তিত্বের সঙ্গে, স্মৃতির সঙ্গে।
তবে রবিবারের হাটে কেনাকাটা শেষে বাড়ি ফেরার জন্য, অথবা শরীর খারাপ হলে ধীরগতির একটুকরো নিরাপত্তা চাইলে—আজও কিছু মানুষ রিকশার দিকে হাত বাড়ান। তাই শহরের ব্যস্ত রাস্তায় মাঝেমধ্যে দেখা মেলে এক-আধটা রিকশার টুং-টুং ঘণ্টা—যার ছন্দে মিশে আছে বালুরঘাটের অতীত।
এইসব দৃশ্য যেন একটাই কথা বলে—গন্তব্যে পৌঁছলেও, রিকশাচালকদের এই যাত্রাপথ যেন আজও অনিশ্চয়তার, অথৈ জলের যাত্রা।