ভুয়ো ST সার্টিফিকেট নিয়ে সরব তিপ্রামথা: কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে এবার TFDPC-র এমডি-র বিরুদ্ধে সরব বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা

Spread the love

আবারও রাজ্যের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়ে এক গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা, যশপাল সিং, ত্রিপুরা:

শাসক জোটের শরিক দল তিপ্রা মথার খোয়াই রামচন্দ্রঘাট কেন্দ্রের বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা আবারও রাজ্যের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়ে এক গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিলেন। এবার তাঁর অভিযোগের তির ত্রিপুরা বন উন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণ নিগম (TFDPC Ltd.)-এর এক কর্মীর বিরুদ্ধে, যিনি ভুয়ো তপশিলি উপজাতি (ST) সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরি এবং পদোন্নতি পেয়েছেন বলে অভিযোগ।

শুধু তাই নয়, রাজ্য স্তরীয় স্ক্রুটিনি কমিটির (SLSC) নির্দেশের পরেও অভিযুক্ত কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায়, খোদ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে ‘কর্তব্যে চরম গাফিলতি’র (Dereliction of Government Duty) অভিযোগ তুলে বনমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন বিধায়ক।
বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা বনমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, TFDPC Ltd.-এর অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে কর্মরত সুব্রত কৈরি আদতে ‘কৈরি’ (Koiri) সম্প্রদায়ের মানুষ, যা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় তালিকা অনুযায়ী অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি বা OBC-এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তিনি ভুয়ো ST সার্টিফিকেট ব্যবহার করে প্রথমে তাঁর প্রয়াত পিতার পরিবর্তে লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক (LDC) হিসেবে চাকরি পান এবং পরবর্তীতে অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে পদোন্নতিও লাভ করেন।

বিধায়কের দেওয়া নথি অনুযায়ী, অভিযুক্তের পিতা, স্বর্গীয় ভগবান কৈরি, ১৯৮৪ সালে বিলোনিয়া থেকে একটি সার্টিফিকেট নেন, যেখানে তাঁর সম্প্রদায় হিসেবে ‘কৌর’ (KAUR) উল্লেখ করা হয়। সেই সার্টিফিকেটের ভিত্তিতেই সুব্রত কৈরি ১৯৮৯ সালে খোয়াইয়ের এসডিও অফিস থেকে নিজের জন্য ‘কৌর’ সম্প্রদায়ের ST সার্টিফিকেট তৈরি করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ‘কৌর’ নামে ত্রিপুরায় কোনো স্বীকৃত তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায় নেই। অন্যদিকে, ‘কৈরি’ সম্প্রদায়টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় তালিকায় OBC হিসেবে নথিভুক্ত (ক্রমিক নং ১৭ ও ১৮)। এই ঘটনায় সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর মোড় হলো প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা। বিধায়ক তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, রাজ্য স্তরীয় স্ক্রুটিনি কমিটি (SLSC) এই বিষয়ে তদন্ত করে গত ১২ই জুলাই, ২০২৩ তারিখে রিপোর্ট জমা দেয়, যেখানে সুব্রত কৈরির সার্টিফিকেটটি ভুয়ো বলে প্রমাণিত হয়। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে, SLSC-এর সদস্য তথা জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব এস. প্রভু গত ২৭শে জুলাই, ২০২৩ তারিখে TFDPC-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে সুব্রত কৈরির নিয়োগ বাতিল করার এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই নির্দেশের এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও, ম্যানেজিং ডিরেক্টর অভিযুক্ত কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে বিধায়ক অভিযোগ করেছেন।

এই নিষ্ক্রিয়তাকে ‘কর্তব্যে চরম গাফিলতি’ হিসেবে উল্লেখ করে বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা বনমন্ত্রীর কাছে TFDPC-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করার এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। শাসক জোটের এক বিধায়কের এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনা শুধুমাত্র ভুয়ো সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরি পাওয়ার বিষয়টিকে নয়, বরং প্রশাসনিক কর্তাদের দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছতা নিয়েও এক বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *