ত্রিপুরার গণবণ্টন ব্যবস্থাকে আধুনিক ও জনমুখী করতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ: পিভিসি রেশন কার্ডের সূচনা

Spread the love

ত্রিপুরার গণবণ্টন ব্যবস্থাকে আধুনিক ও জনমুখী করতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ: পিভিসি রেশন কার্ডের সূচনা

নিজস্ব সংবাদদাতা, যশপাল সিং, ত্রিপুরা:

রাজ্যের গণবণ্টন ব্যবস্থাকে (PDS) আরও শক্তিশালী, স্বচ্ছ এবং গ্রাহক-বান্ধব করার লক্ষ্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলো ত্রিপুরা সরকার। আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১নং হলে আয়োজিত এক রাজ্যভিত্তিক মতবিনিময় সভায় খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এই ঘোষণা করেন। এই অনুষ্ঠানে দপ্তরের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিক, রেশন ডিলার এবং পরিবহন ঠিকাদারগণ অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জানান, ভোক্তাদের সুবিধার জন্য পুরোনো রেশন কার্ডের পরিবর্তে অত্যাধুনিক পিভিসি (PVC) রেশন কার্ড চালু করা হচ্ছে। আজ থেকেই এই নতুন কার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৪ লক্ষ ৭৮ হাজার পিভিসি কার্ড তৈরি করা হয়েছে, যা রেশন ডিলারগণ সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ছোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিলি করবেন।

মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ত্রিপুরার গণবণ্টন ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরা প্রথম স্থানে এবং সারা দেশে তৃতীয় বা চতুর্থ স্থানে রয়েছে। বর্তমানে ই-কেওয়াইসি (e-KYC) প্রক্রিয়ায় রাজ্যের সাফল্য ৮১ শতাংশ, যা ১০০ শতাংশে উন্নীত করে ত্রিপুরাকে দেশসেরা করাই লক্ষ্য। তিনি রেশন দোকানগুলিতে পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখা এবং যথাসময়ে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ ও সরবরাহ নিশ্চিত করার উপর জোর দেন। প্রথম ধাপে ৬০০টি রেশন শপকে মডেল রেশন শপে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। ডিলারদের কমিশন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আগে অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা এবং প্রায়োরিটি গ্রুপে ডিলারগণ ১৪৩ টাকা কমিশন পেতেন, যা এখন ১৮-০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

সুশান্ত চৌধুরী বলেন, গণবণ্টন ব্যবস্থায় কোনো রকম নেতিবাচক পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সেদিকে কঠোর নজর রাখা হবে। এই ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও সুন্দর করতে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাজ্য সরকার মসুর ডালের ক্ষেত্রে প্রতি কিলো ২৫ টাকা এবং চিনির ক্ষেত্রে প্রতি কিলো ১৫ টাকা ভর্তুকি প্রদান করে। আসন্ন দুর্গাপূজায় ভোক্তাদের আটা, ময়দা ও সুজি সরবরাহ করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।

আলোচনা পর্বে খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের বিশেষ সচিব দেবপ্রিয় বর্ধন জানান, রাজ্যের রেশন শপগুলিকে আরও ভালোভাবে এবং গণবণ্টন ব্যবস্থাকে আরও সুচারুভাবে পরিচালনার জন্যই এই মতবিনিময়। তিনি স্বচ্ছতার সঙ্গে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার উপর জোর দেন এবং ভোক্তাদের ‘মেরা রেশন অ্যাপ’ (Mera Ration App) ও ‘অন্ন সহায়তা অ্যাপ’ (Anna Sahayata App) এর মাধ্যমে অভিযোগ জানানোর সুযোগের কথা উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের অধিকর্তা সুমিত লোধ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সদর মহকুমার মহকুমা শাসক মানিকলাল দাস, মোহনপুর মহকুমার মহকুমা শাসক সুভাষ দত্ত এবং জিরানীয়া মহকুমার মহকুমা শাসক অনিমেষ ধর। এই বিশেষ মুহূর্তে খাদ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ রেশন ভোক্তা ও রেশন ডিলারদের হাতে নতুন পিভিসি রেশন কার্ড তুলে দেন, যা রাজ্যের গণবণ্টন ব্যবস্থার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *