
২০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ, ত্রিপুরা সহ ৪ রাজ্যে ইডি’র মেগা-রেইড, নিশানায় ‘প্রতারক’ উৎপল চৌধুরী
নিজস্ব সংবাদদাতা, যশপাল সিং, ত্রিপুরা:
ত্রিপুরার কুখ্যাত ‘প্রতারক’ উৎপল কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে এবার আসরে নামল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ২০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ পাচারের অভিযোগে ইডি ত্রিপুরা, দিল্লি, হরিয়ানা এবং পশ্চিমবঙ্গ—এই চার রাজ্যের বিভিন্ন ঠিকানায় একযোগে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানে নগদ ৭ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি, প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা থাকা একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।

ইডি সূত্রে জানা গেছে, এই অভিযানের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ত্রিপুরা-ভিত্তিক উৎপল কুমার চৌধুরী, যে বর্তমানে হরিয়ানার একটি জেলে বন্দি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের দায়ের করা একাধিক এফআইআর-এর ভিত্তিতেই ইডি এই তদন্ত শুরু করে। তদন্তে জানা গেছে, উৎপল চৌধুরী সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নামের সাথে মিলিয়ে একাধিক ভুয়ো সংস্থা তৈরি করেছিল। যেমন—ত্রিপুরা উচ্চ শিক্ষা অধিকরণ (Directorate of Higher Education Tripura), ব্রিজ অ্যান্ড রুফ কোম্পানি এবং ডিরেক্টরেট অফ অ্যাপারেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া। এই ভুয়ো সংস্থার নামে সে সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগ করতে প্রলুব্ধ করত। জানা যায়, উৎপল নিজেকে ভারত সরকারের একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সরকারি কন্ট্রাক্ট পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করত। নিজেকে Tripura Higher Education Directorate-এর প্রধান হিসেবে পরিচয় দিয়ে সে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ছাত্র পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং মিড-ডে মিলের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার নামেও প্রতারণা করেছে।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, উৎপল চৌধুরী বিদেশি অনুদান (FCRA) প্রাপ্ত একটি এনজিও, ‘চলতাখালি স্বামীজি সেবা সঙ্ঘ’-এর নিয়ন্ত্রণও জালিয়াতি করে নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছিল। এই এনজিও-র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেই সে বিভিন্ন ব্যক্তির টাকা পাচার করত।
প্রাথমিক তদন্তে ইডি জানতে পেরেছে, এই এনজিও-র মাধ্যমে হরিয়ানা, কলকাতা এবং দিল্লির বিভিন্ন সংস্থায় ভুয়ো রাবার ব্যবসার আড়ালে প্রায় ২০০ কোটি টাকারও বেশি পাচার করা হয়েছে। রাবার ব্যবসার নামে দেখানো সমস্ত লেনদেন ছিল শুধুমাত্র কাগজে-কলমে, বাস্তবে কোনো রাবার কেনা-বেচা হয়নি।
ইডি-র আগরতলা সাব-জোনাল অফিসের আধিকারিকরা এই তল্লাশি অভিযান চালান। অভিযানে বিভিন্ন অভিযোগমূলক ডিজিটাল এবং ভৌত প্রমাণ, ত্রিপুরা খাদ্য দপ্তর, উচ্চ শিক্ষা অধিকরণ, প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকরণ সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ভুয়ো স্ট্যাম্প এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভুয়ো পরিচয়পত্র উদ্ধার ও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এছাড়াও, ত্রিপুরার বিভিন্ন জায়গায় রিয়েল এস্টেট এবং জমিতে বিনিয়োগের অভিযোগমূলক প্রমাণও মিলেছে।
ত্রিপুরা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ইডি এদিন পশ্চিম ত্রিপুরার খয়েরপুর ও অরুন্ধুতিনগরে এবং সিপাহীজলা জেলার নলছড়ে তল্লাশি চালিয়েছে। নলছড়ে উৎপল চৌধুরীর শ্বশুরের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। ইডি সূত্রে আরও জানা গেছে, উৎপল চৌধুরীর সাথে কিছু বরিষ্ঠ আধিকারিকের ঘনিষ্ঠতা ছিল, যাঁরা তাকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে উচ্চপদস্থ আধিকারিক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতেন। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই সে ব্যবসায়ীদের প্রতারণা করত এবং বিনিময়ে ওই বরিষ্ঠ আধিকারিকদেরও মোটা অঙ্কের টাকা দিত বলে অভিযোগ। ইডি জানিয়েছে, এই বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে।