কুমোরটুলির জন্ম কীভাবে ? বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি কেমন ?

Spread the love

কুমোরটুলির জন্ম কীভাবে ? বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি কেমন?

মধুমিতা দাঁ : আকাশে বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ। পাড়ার মোড়ে হোক বা বড় রাস্তার ধারে, উঁকি দিচ্ছে শারদীয়ার ব্যানার-ফেস্টুন। প্যান্ডেলের গায়ে চলছে শেষ মুহূর্তের আঁকিবুকি। আসলে দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন যে শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই তৎপরতাও তুঙ্গে বাড়ির পুজো থেকে শুরু করে বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলিতে। কার প্যান্ডেল নজরকাড়া হবে, কোন মন্ডপে দুর্গামূর্তি বেশি আকর্ষণীয়, এই নিয়ে একটা অলিখিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলেই আসে। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে যেমন টক্কর দেখা যায় তেমনই দুর্গা প্রতিমার মধ্যেও কিন্তু একটা টক্কর থাকে।

এই মূর্তি গড়ার ‘খনি’ উত্তর কলকাতার ‘কুমোরটুলি’। এখান থেকেই বেশিরভাগ বড় বড় পুজো কমেটিগুলি প্রতিমা নিয়ে আসে। বর্তমানে কুমোরটুলিতে তৎপরতা তুঙ্গে। নিঃশ্বাস ফেলার ফুরসত নেই শিল্পীদের। নাওয়া-খাওয়াও ভুলেছে তারা। আরো চাপ পড়ে গিয়েছে গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে। সেই সময় তো কাজ করে উঠতে পারেননি শিল্পীরা। তাই রাত-দিন এক করে চলছে মূর্তি প্রস্তুতির কাজ। কুমোরটুলির অলিতে গলিতে এখন চরম ব্যস্ত শিল্পীরা।

কুমোরটুলির মূর্তি শুধু আমাদের রাজ্য নয়, রাজ্য ছাড়িয়ে ভিন্ন রাজ্যে এমনকি বিদেশেও পৌঁছে যায়। সে ক্ষেত্রে শিল্পীদের আরো সচেতন হয়ে কাজ করতে হয়। মুর্তি গড়া থেকে প্যাকেজিং সবটাই সারতে হয় সময়ের মধ্যে, যত্নশিল হয়ে।

যে কুমোরটুলিতে এত ব্যস্ততা, দিনে-রাতে মাটি দিয়ে চলছে ভাঙা-গড়ার যুদ্ধ, সেই কুমোরটুলির জন্ম কীভাবে? উত্তর জানতে হলে আমাদেরকে ফিরতে হবে ইতিহাসের পাতায়। পলাশী যুদ্ধের সময়কার প্রেক্ষাপটে। সেই সময় সুতানটি এবং আশেপাশে বেশ কিছু এলাকায় বসবাস গড়ে উঠেছিল জমিদারদের। সেই সময় এখনকার মতো এতো বারোয়ারি পুজোর চল ছিল না। বাড়িতেই হতো দুর্গাপুজো। এই বাড়ি বাড়ি দুর্গাপুজোর প্রতিমা গড়তে আসতেন নদীয়ার মৃৎ শিল্পীরা। প্রতিবছর এটাই ছিল তাদের দায়িত্ব। তবে এতদুর রাস্তা, এভাবে অনেকদিন পরিবার ছেড়ে থাকতে সমস্যায় পড়তেন মৃৎশিল্পীরা। তাই তারা করলেন কি ঐ এলাকার কিছুটা জঙ্গল পরিষ্কার করে বসবাস করতে শুরু করেদিলেন। সারা বছর সেই ভাবে যেহেতু মূর্তি গড়ার কাজ থাকত না, তাই তারা বছরের অন্যান্য সময় মাটি দিয়ে বাজি বানাতেন। এরপর ধীরে ধীরে জনবসতি বাড়তে শুরু করে। বাড়তে থাকে মূর্তি তৈরির বরাতও। এদিকে ধীরে ধীরে মৃৎশিল্পীদের ঐ জঙ্গলে লাগোয়া এলাকা কুমোরটুলি নামে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে। যা আজ তামাম বিশ্বও জানে কুমোরটুলির নামে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *