১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল সহ তিনটি বিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় পেশ করেছেন।

Spread the love

প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী, ৩০ দিনের বেশি গারদে থাকলেই চলে যাবে চেয়ার । অমিত শাহ বিল পেশ করতেই সংসদে ধুন্ধুমার

৩০ দিনের জেল মানেই পদ খোওয়া, অমিত শাহের বিল ঘিরে লোকসভায় তাণ্ডব!

—সৌভিক দাস

বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় একসঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ করেন, যার মধ্যে রয়েছে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল। এই বিলে এমন প্রস্তাব রাখা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী কিংবা অন্য কোনও জনপ্রতিনিধি যদি গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ৩০ দিনের বেশি জেলে থাকেন, তবে তাঁকে পদ ছাড়তে হবে।

অমিত শাহের দাবি, এই পদক্ষেপ রাজনীতিকে অপরাধমুক্ত করার এক বড় পদক্ষেপ। কিন্তু বিরোধীরা এই বিলকে গণতন্ত্রের উপর সরাসরি আক্রমণ বলে অভিযোগ করেছে। বিরোধী জোট ‘INDIA’ এককাট্টা হয়ে সংসদে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এমনকি লোকসভায় তুমুল হট্টগোল শুরু হয়, বিরোধীরা বিলের কপি ছিঁড়ে তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকে ছুড়েও দেয়।

তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলকে ‘হিটলারি বিল’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর অভিযোগ, এই আইনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে কার্যত হত্যা করা হচ্ছে। মমতার মতে, আদালতে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগে কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে পদচ্যুত করার বিধান আসলে গণতান্ত্রিক কাঠামোর বিরোধী।

অন্যদিকে, বিজেপি দাবি করেছে, বিরোধীরা আসলে দুর্নীতিগ্রস্ত ও অপরাধী রাজনীতিবিদদের বাঁচাতেই এত আপত্তি তুলছে। তাদের মতে, এই বিল কার্যকর হলে দেশের রাজনীতি আরও স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন হবে।

ফলে সংসদে এখন কার্যত মুখোমুখি লড়াই ruling BJP ও INDIA জোটের। একপক্ষ বলছে অপরাধমুক্ত রাজনীতি, আরেকপক্ষ বলছে গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরা হচ্ছে। এই বিল নিয়ে পরবর্তী দিনে সংসদে আরও বিস্ফোরক পরিস্থিতি তৈরি হবে বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের।

বিলটি পেশ হওয়ার পর থেকেই সংসদে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে। বিজেপি সাংসদরা অমিত শাহর বক্তব্যকে হাততালি দিয়ে সমর্থন করলেও, বিরোধীরা আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে প্রবল হট্টগোল শুরু করে। কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, বামপন্থী দল—সবাই একসঙ্গে বিলটির বিরোধিতা করে। তাঁদের মতে, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি যদি শুধুমাত্র অভিযুক্ত হওয়ার ভিত্তিতে পদ হারান, তবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নামে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হবে।

কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “এই বিল পাশ হলে ক্ষমতাসীনরা মিথ্যা মামলায় বিরোধীদের ফাঁসিয়ে একের পর এক জনপ্রতিনিধিকে পদচ্যুত করবে। এতে জনগণের রায়ের মূল্য শেষ হয়ে যাবে।” তাঁর বক্তব্যে কংগ্রেস বেঞ্চ থেকে হাততালি পড়ে।

অন্যদিকে সমাজবাদী পার্টির পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, উত্তরপ্রদেশ কিংবা উত্তর ভারতে প্রায়ই বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। যদি এই বিল কার্যকর হয়, তবে বিজেপি সরকার বিরোধী নেতাদের জেলে ভরে রেখে ক্ষমতা কুক্ষিগত করবে।

তৃণমূল সাংসদরা এদিন বিশেষভাবে সরব ছিলেন। তাঁরা বিলের কপি ছিঁড়ে মন্ত্রীর দিকে ছুড়ে দেন এবং লোকসভা স্পিকারের চেয়ারের সামনে গিয়ে স্লোগান দেন। ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’, ‘হিটলারি বিল মানি না’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয় সংসদ। এমনকি এক পর্যায়ে অধিবেশন স্থগিত করতে বাধ্য হন স্পিকার।

অমিত শাহ অবশ্য নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “যে জনপ্রতিনিধি সৎ, তাঁর ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যাঁদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অপরাধের উপর দাঁড়িয়ে, তাঁরাই এই বিলকে ভয় পাচ্ছেন। ভারতকে অপরাধমুক্ত রাজনীতি দেওয়ার সংকল্প নিয়েই এই বিল আনা হয়েছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এই বিল কার্যকর হলে ভবিষ্যতে ভারতীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাবে। একদিকে এটি দুর্নীতিগ্রস্ত বা অপরাধী রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে পারে, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা হতে পারে। তাই এখন থেকেই আশঙ্কা বেড়েছে যে আদালতে চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিদের পদচ্যুত করা আসলে গণতন্ত্রের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দিতে পারে।

এই বিল নিয়ে দেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন, অপরাধীদের রাজনীতিতে কোনও স্থান থাকা উচিত নয়, তাই এই আইন কার্যকর হলে সেটি দেশকে দুর্নীতি ও অপরাধ থেকে মুক্ত করবে। আবার কেউ বলছেন, এই আইন কার্যকর হলে শাসকদলই আসল সুবিধাভোগী হবে এবং বিরোধী নেতারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হবেন। তাই জনগণের রায় ও বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা—দুই দিকই এই বিলকে কেন্দ্র করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *