আরামবাগের শেষ স্বাধীনতা সংগ্রামী গোপাল চন্দ্র ভক্তের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা অঞ্চল

Spread the love

আরামবাগ আবার হারাল এক মহামূল্যবান রত্নকে।

আরামবাগের শেষ স্বাধীনতা সংগ্রামী গোপাল চন্দ্র ভক্তের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা অঞ্চল

আরামবাগ আবার হারাল এক মহামূল্যবান রত্নকে। গতকাল, ১৮ জুন সন্ধ্যায়, প্রয়াত হয়েছেন আরামবাগ সাবডিভিশনের শেষ জীবিত স্বাধীনতা সংগ্রামী, শ্রদ্ধেয় শ্রী গোপাল চন্দ্র ভক্ত। তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৯৬ বছর। মৃত্যুর সময় তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন আরামবাগ সদর হাসপাতালে। দেশের ইতিহাসে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য, আর তাঁর মৃত্যুতে শুধুমাত্র তাঁর পরিবার নয়, শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র অঞ্চলবাসী।

শ্রী গোপাল চন্দ্র ভক্ত ছিলেন এক অকুতোভয় যোদ্ধা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল সময়ে, তিনি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, ক্ষুদিরাম বসু, বাঘা যতীন, যতীন দাস ও মহাত্মা গান্ধীর মতো মহান বিপ্লবীদের থেকে প্রেরণা গ্রহণ করে ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেন। তিনি অত্যাচার সহ্য করেও পিছু হটেননি। ১৯৪৬ সালে ইংরেজদের গুলিতে আহত হন এবং পরবর্তীতে কারাবরণও করেন। জীবনের সেই সংগ্রামী অধ্যায় তাঁকে এক কিংবদন্তিতে পরিণত করে।

শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবেই নয়, গোপালবাবু ছিলেন একজন মানবদরদী, সমাজসেবী এবং সর্বস্তরে সম্মানিত মানুষ। দানধ্যান, গরিব-দুঃখীদের সাহায্য, সামাজিক কর্মকাণ্ড—সব ক্ষেত্রেই ছিল তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি। ৯৬ বছর বয়সেও ছিল তাঁর দেহের দৃঢ়তা ও চিত্তের প্রখরতা। তিনি প্রায় প্রতিদিনই চাঁপাডাঙ্গা বাজারে প্রায় ২ কিমি পায়ে হেঁটে যেতেন, মাঠে চাষবাস করতেন, প্রখর রোদ কিংবা বৃষ্টিকে থোড়াই কেয়ার করতেন।

১৮ জুন হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের সদস্যরা তড়িঘড়ি তাঁকে আরামবাগ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রথমদিকে কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থা জটিল হয়ে ওঠে। শেষমেশ রাত ১০টা ৩০ মিনিট নাগাদ চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

গোপালবাবুর মৃত্যুতে তাঁর পরিবার, প্রতিবেশী এবং গোটা এলাকা শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাঁর প্রয়াণ যেন ভারতের এক জীবন্ত ইতিহাসের পতন। আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি সুশান্ত বেরা মহাশয়ও ১৮ জুন হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন এবং ১৯ জুন তাঁর মৃতদেহে জাতীয় পতাকা ও মাল্যদানের মাধ্যমে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

একান্ত আবেগভরা পরিবেশে গোপালবাবুর দেহে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে তাঁকে বিদায় জানানো হয়। তাঁর স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে ‘ক্রাইম প্রেস বেঙ্গল নিউজ’-এর পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা।

এই প্রয়াণে যেন এক ইতিহাস শেষ হয়ে গেল। গোপালবাবুর মত মানুষেরা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত নিজেদের দেশের, মাটির এবং মানুষের পাশে থেকেছেন। তাঁর জীবন আমাদের কাছে এক শিক্ষার, এক প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

গোটা জাতি ও সমাজের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি—বিদায় বিপ্লবী, শান্তিতে থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *