স্লোগানের আগুনে ফেটে পড়ল হুগলির ভাবাদিঘি চত্বর

ভাবাদিঘি বাঁচাতে উত্তাল গ্রামবাসী, তারকেশ্বর–বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পের অচলাবস্থা
✍️ সৌরভ চক্রবর্ত্তী
ক্রাইম প্রেস বেঙ্গল নিউজ, হুগলি।
“টাকা চাই না, পয়সা চাই না,
আমরা নয়কো লোভী,
শরীরের শেষ রক্ত দিয়ে
আমরা বাঁচাবো দিঘি।”
এইস্লোগানের আগুনে ফেটে পড়ল হুগলির ভাবাদিঘি চত্বর। তারকেশ্বর–বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে হলেও, মাত্র ৬০০ মিটার জমিই হয়ে উঠেছে প্রবল বাধা। সেই জমিই ভাবাদিঘি—গ্রামবাসীর অমূল্য ঐতিহ্য ও জীবিকার উৎস।
রেললাইন পাতার কাজ ইতিমধ্যেই গোঘাট ও কামারপুকুর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। অন্যদিকে বিষ্ণুপুর থেকে জয়রামবাটি পর্যন্ত সিআরএস সম্পন্ন। কামারপুকুরে নতুন রেলস্টেশন ও তৈরি। বাকি শুধু ভাবাদিঘি অংশ। অথচ এই ৬০০ মিটার নিয়ে গ্রামবাসী ও রেলের সংঘাত জিইয়ে আছে বছরের পর বছর।
মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎই পরিদর্শনে আসেন রেলের আধিকারিকরা। খবর পেতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারীরা। হাতে প্ল্যাকার্ড, গলায় তীব্র স্লোগান—রেল কর্তাদের ঘিরে ধরেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি রেল ও রাজ্য সরকার।
গ্রামবাসী দিলীপ পণ্ডিতের আক্ষেপ, – “আমাদের পুকুরে রেললাইন হবে, অথচ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজনও মনে করছে না রেল। কেবল মাটি খুঁড়ে চলে যাচ্ছে।”
ভাবাদিঘি বাঁচাও কমিটির সম্পাদক সুকুমার রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, – “আমরা রেলকে বাধা দিতে চাই না। কিন্তু ফাঁকা মাঠ ছেড়ে কেন ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে দিঘির বুক চিরে লাইন বসানোর পরিকল্পনা করছে, সেটা কেউ বোঝাতে পারছে না। আলোচনার এক শতাংশও বাস্তবায়িত হয়নি।”
গ্রামবাসীর দাবি একটাই—”রেললাইন বিকল্প জমি দিয়ে বসুক। তাহলেই যেমন প্রকল্প সম্পূর্ণ হবে, তেমনি বাঁচবে শতাব্দী প্রাচীন ভাবাদিঘি”।
আন্দোলনকারীরা ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—জলাশয় রক্ষার লড়াই হবে জীবন বাজি রেখে। ফলে প্রশ্ন একটাই: রেল কর্তৃপক্ষ কি এবার পিছিয়ে আসবে, নাকি দিঘির বুক চিরেই এগোবে প্রকল্প?