তিলোত্তমা-কাণ্ডে ফের নতুন মোড়

প্রকাশ্যে কুণালের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, টাকার বিনিময়ে রফার অভিযোগে বিস্ফোরণ তিলোত্তমা-কাণ্ডে!
—সৌভিক দাস
কলকাতা: তিলোত্তমা-কাণ্ডে ফের নতুন মোড়। বুধবার তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ তিলোত্তমার বাবাকে মানহানির নোটিস পাঠান। ঠিক তার পরেই পাল্টা বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন নির্যাতিতার পরিবার। সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা প্রকাশ্যে আনলেন এক হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, যেখানে প্রেরকের নাম লেখা ছিল— ‘TMC Kunal Ghosh’। অভিযোগ, টাকা দিয়ে বিষয়টি রফার চেষ্টা করেছিলেন কুণাল ঘোষ।
তিলোত্তমার মা বলেন, “ওঁর মন আছে বলে মনে করি না। নামটাও মুখে নেব না।” সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুললে, কুণাল ঘোষ কি সিবিআইয়ের কাছে গিয়ে সেটেলমেন্ট করতে চেয়েছিলেন? একসঙ্গে উত্তর দেন মা-বাবা— “হ্যাঁ। আমাদের কথা বিশ্বাস না হলে এই বিষয়টি নিয়েই তদন্ত হোক।”
পরিবারের দাবি, কুণাল ঘোষ বারবার ফোন করতেন, মেসেজ পাঠাতেন, এমনকি একবার ভিডিওও পাঠিয়েছিলেন। তিলোত্তমার বাবা জানান, “প্রচুর রকম মেসেজ করেছেন উনি। কখনও আমাদের সঠিক বা ভুল পথ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। আবার বলেছিলেন, আপনাদের এত টাকা দিচ্ছি, ব্যাপারটা মিটিয়ে নিন।” যদিও টাকার বিনিময়ে রফার সরাসরি প্রমাণ দেখাতে পারেননি তাঁরা।
অন্যদিকে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন কুণাল ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, “তিলোত্তমার বাবা বলছেন আমি নাকি ফোন করে রফার চেষ্টা করতাম। এতদিন বাদে হঠাৎ এই অভিযোগ কেন? কতটা মিথ্যা বলতে শেখালে এতদিন পরে এসব বলা যায়? তারপর আবার নাকি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট দেখিয়েছেন! আমি হাত জোড় করে বলছি, কোর্টে সমন যাবে। মাননীয় বিচারকের সামনে এগুলো দিন।”
তিলোত্তমা-কাণ্ডে কুণাল ঘোষের নাম জড়ানোয় রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে তীব্র চর্চা। বিরোধী শিবির সরাসরি অভিযোগ তুলেছে, শাসক দলের প্রভাবশালী নেতারা তদন্ত প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছেন এবং পরিবারকে চাপে ফেলতে চাইছেন। তাঁদের দাবি, যদি পরিবার যে চ্যাট দেখিয়েছে তা সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে গোটা কাণ্ডে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে।
শাসক দলের একাংশ অবশ্য দাবি করছে, বিরোধীরা রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে বিষয়টিকে বাড়িয়ে দেখাচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, যেহেতু আদালতে মামলা চলছে, তাই আদালতই সবকিছু খতিয়ে দেখবে। এ ধরনের অভিযোগ কেবলমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট আদালতে পেশ করা হলে তার সত্যতা ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা সম্ভব। চ্যাটের উৎস, সময় এবং প্রেরকের পরিচয় খতিয়ে দেখলে অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে পরিবারের অভিযোগ টিকলে মামলার মোড় ঘুরে যেতে পারে একেবারেই অন্য দিকে।
এদিকে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠছে, এতদিন ধরে এই অভিযোগ গোপন রাখা হল কেন? কুণাল ঘোষও একই প্রশ্ন তুলেছেন। তবে নির্যাতিতার পরিবার বলছে, শুরু থেকেই তাঁরা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপে ছিলেন। নানা ভয়-ভীতি এবং আতঙ্কের কারণে সবকিছু প্রকাশ্যে বলতে পারেননি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি বদলেছে, তাই এখন মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার প্রভাব সীমিত থাকবে না কেবল আদালতের চার দেয়ালের মধ্যে। বিরোধীরা যদি এটিকে হাতিয়ার করে জনমুখী প্রচার শুরু করে, তাহলে শাসক দলের অস্বস্তি আরও বাড়তে বাধ্য। বিশেষ করে আসন্ন ভোটের আগে তিলোত্তমা-কাণ্ড আবারও রাজনৈতিক মঞ্চে বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে।
তিলোত্তমার মৃত্যু ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু থেকেই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এবার প্রকাশ্যে কুণাল ঘোষ এবং নির্যাতিতার পরিবারের এই দ্বন্দ্বে ফের উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। আদালতের রায় কী হয়, সেটাই এখন সকলের নজরে।